সাদা পলিথিনে করোনার কালে

জুয়েইরিযাহ মউ

এক. টিল্লার দাফন
ছফদার আলি টিল্লার কাছের চায়ের দোকানে গেল কাপের উপরে ভাসতে থাকা ছাড়া-ছাড়া সর দিয়ে দুধ চা খেতে। কেবল ঢুকে বসেছিল চেয়ারে, এমন সময় কে যে কোন্‌ দিক থেকে বলে উঠলো – ‘আফনে আসলা নানি ঔ করোনার দাফনোর সময়, ইয়া মাবুদ!’
কথাটা শেষ হওয়ার মুহূর্তেই অনেকগুলো কন্ঠস্বর দলা পাকিয়ে আছড়ে পড়লো চায়ের দোকানে। গিজ গিজ করতে থাকা মানুষেরা এক জোট হয়ে ছফদার আলিকে শুন্যে তুলে কিছুটা রাস্তা বয়ে নিয়ে এলো। টিল্লার যে মাথায় কিছুক্ষণ আগে সাদা পলিথিনে মোড়ানো একজন অসাড় মানুষকে সাদা পলিথিনে মোড়া দু’তিনজন দাফন করে গেল, সেই মাথা পেরিয়ে রাস্তার এক পাশে তারা ছফদার আলিকে নামিয়ে রাখলো। হেঁটে আসতে আসতে দলাটা বড় হয়ে উঠছিল, থেমে যাওয়াতে আরও বড় হল। দলার মাঝখানে মাটিতে পড়ে থাকা ছফদার আলি অসহায়ভাবে দু’একবার বলতে চাইলো – ‘আমি লাশ ধরছিনা বা।’
সমস্তের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় কালো সানগ্লাস-লঠ¾à¦² গেঞ্জি-à¦¬à§à¦²à  জিন্সপ্যান ্ট বললো, ‘বাসাত গিয়া গোছল করোউক্কা সেভলন দি।’
পানের ডাটা থেকে মুখে চুন চালান করে দিয়ে একজন বললো – ইতা সাভলনো যায় না বা, সাবানউ ভালা। ফেসবুকো লেখছে।
ব্লু জিন্সপ্যান ্টের তখন মানুষের দলার সামনে হার-জিতের কীড়া মগজে কিলবিলিয়ে উঠলো। দুপুরে খাওয়া মাংসের ঢেকুর তুলে বললো- হু বুজইন নি, হু? ওয়ার্ল্ড হেলথ à¦“à¦°à§à¦—à¦¾à¦¨à¦¾à¦‡à¦œà ‡à¦¶à¦¨à§‹à¦° ফেজো তারা সাভলনোর নাম লিখছে। ফেসবুকতো সব রোং ইনফরমেশন।
সাবান আর স্যাভলনের এহেন তর্কের মাঝখানে ছফদার আলি আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টায় আরেকবার বলে উঠলো – ‘আমি লাশ ধরছি না বা।’



দুই. লেবেল মারা মানুষ
নীল ট্রাক দাঁড়ানো পাঁচ ফিট দূরত্বে রাস্তার পাশে, রাজন তরফদার দেখে, মানুষেরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, লাইন ধরানো যাচ্ছে না কিছুতেই। রাজন তরফদার মাস্ক-à¦—à§à¦²à¦¾à ­à¦¸ সহ পথ চলতে চলতে থামে। দেখে কিছুটা সময় নিয়ে। তার পিঠে এ-ফোর সাইজের কাগজ সাঁটা, তাতে লেখা ‘স্বাস্থ্ঠকর্মী – জরুরী সেবায় নিয়োজিত’।
তিন. প্যাকেটজাঠ¤ খাবার
শহরে এখন তিনটা কাঁচের ঘর। একটায় সবুজ পোষাকে ঘুরছে স্বাস্থ্যঠর্মীরা, আরেকটায় সাদাতে আর অন্যটায় কালো। কালচে পোষাকের মানুষেরা মূলত স্বাস্থ্যঠর্মী নন। তারা স্বেচ্ছাসৠ‡à¦¬à¦•, তাদের কোন স্বজনই পৃথিবীতে আর জীবিত নেই।
শহরে এখন আরাম-আরাম বিকেল, শহর প্রায় জনমানবহীন, চুপচাপ! এই বিকেলে আজিজের পাশের গলিতে নরোম রোদ গলে পড়ে। এই গলিতে এককালে চায়ের দোকান ছিল আমার, ঘোর মহামারীর আগে। গলির খুব কাছেই কালচে মানুষদের ঘরটা তৈরি করেছে সরকার!
সবুজ-দের যে ঘর, সেখানে মৃতদের নেমপ্লেটসঠ¹ যত্ন করে দাফন করা হয়, সাদারা পরীক্ষা ছাড়াই স্বজনবিহীঠদাফনের কাজ সারে।
তবু এখন কালো-র দিকেই বেশিরভাগ মানুষকে দেখা যাচ্ছে, সারি সারি মৃত মানুষকে নিয়ে জীবিত মানুষ দাঁড়িয়ে।
কালো মানুষেরা মৃত মানুষের মাংস এক অদ্ভুত উপায়ে খাওয়ার উপযোগী করে প্যাকেট করে দিচ্ছে। এমনকি মৃত মানুষের মাংস ভালো করে ধুয়ে রান্না করে খেলে মহামারী ছড়াবে না তেমনটাই বলছে বিজ্ঞানীরঠও। এই শহরে বিনামূল্যৠখাদ্য পাওয়ার এখন এই একটাই উপায়!
আমার তিন বছরের মেয়েটার শক্ত শরীর কোলে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি আপাতত...